আমরা সবাই এখন কম-বেশী কার্ড দিয়ে অনলাইন/অফলাইন ট্রানজ্যাকশন করে থাকি। এই ট্রানজ্যাকশন একটি নির্দিষ্ট লাইফসাইকেলের মধ্যে দিয়ে যায়। এই লাইফসাইকেলে অনেকগুলো টার্ম আছে যেগুলো বেশ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। অন্যের কথা জানি না, কিন্তু আমি পেমেন্ট নিয়ে কাজ করার প্রথম দিকে খুব বিভ্রান্তিতে পড়তাম। তাহলে ফিনটেক পেমেন্ট-এর কীওয়ার্ড দিয়ে শুরু করা যাক …
মার্চেন্ট (Merchant): যেই ব্যক্তি পণ্য বিক্রি করেন এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ নেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার জন্য ব্যাংকে একটি বিশেষ একাউন্ট খুলতে হয় যার নাম মার্চেন্ট একাউন্ট. এই একাউন্টে অ্যাকুয়ারার(Acquirer) পণ্য বিক্রির টাকা পাঠায়।
কার্ডধারী (Cardholder): খুব সহজ – যেই ব্যক্তি কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করেন।
অ্যাকুয়ারার (Acquirer): এমন একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা একজন মার্চেন্ট এর হয়ে কার্ড পেমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। যেমন: MTB bank, EBL bank, SSLCommerz, ekpay, General Payment, TSYS, Finaro, Fiserv
অ্যাকুয়ারার যদি সরাসরি কোন ব্যাংক না হয়, তাহলে কোন ব্যাংক এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা (affiliation) থাকতে হবে।
অ্যাকুয়ারিং ব্যাংক (Acquiring Bank): এমন একটি ব্যাংক, যেটা Acquirer হিসেবেও কাজ করে। এর আরেক নাম Merchant Processing Bank. যেমন MTB bank একই সাথে ব্যাংক এবং অ্যাকুয়ারার।
পেমেন্ট গেটওয়ে (Payment Gateway): সফটওয়্যার দিয়ে বানানো অ্যাকুয়ারারের সামনের ইন্টারফেসকেই গেটওয়ে বা পেমেন্ট গেটওয়ে বলে। এর আরেক নাম Acquiring Gateway. যেমন: SSLCommerz, ekpay, TSYS, Fiserv, WEX, Authorize.Net
অ্যাকুয়ারিং প্রসেসর (Acquiring Processor): মুল পেমেন্ট প্রক্রিয়া ইন্জিনকে অ্যাকুয়ারিং প্রসেসরবলে, যেটিও মুলত কিছু লজিক দিয়ে বানানো একটি সফটওয়্যার। এর অপর নাম Merchant Acquirer বা শুধু Acquirer। যেমন: ekpay, SSLCommerz, TSYS, Fiserv, Worldpay, Global Payments
অনেক সময় দেখা যায় একই সফটওয়্যার পেমেন্ট গেটওয়ে এবং অ্যাকুয়ারিং প্রসেসর দুই ভুমিকায় কাজ করে।
পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটর (Payment Aggregator): আমরা হয়ত অনেকেই ছোট ওয়েবসাইটে পেমেন্ট গ্রহণ করার জন্য PayPal ব্যবহার করেছি কিন্তু কোন মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে হয়নি। কারন PayPal একাধিক মার্চেন্টের পক্ষ থেকে পেমেন্ট সংগ্রহ করে এবং এজন্য এর নাম পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটর। এটি মার্চেন্ট অ্যাগ্রিগেটর নামেও পরিচিত। এর খারাপ দিক হচ্ছে এখানে খরচ বেশী। যেমন: Square, PayPal, Stripe
ইস্যুয়ার (Issuer): যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কার্ড নেওয়া যায়। যেমন MTB bank, EBL bank, Chase, Citi, Bank of America, Capital One, Monavate, Marqeta, Galileo, CoreCard
ইস্যুইং ব্যাংক (Issuing Bank): এমন একটি ব্যাংক, যেটা Issuer হিসেবেও কাজ করে। এর অপর নাম Cardholder’s Bank। যেমন EBL bank একই সাথে ব্যাংক এবং Issuer.
অথরাইজেশন ইন্জিন (Authorization Engine): সফটওয়্যার দিয়ে বানানো ইস্যুয়ারের সামনের যেই মডিউলটি চেক করে দেখে PAN, CVV, Expiry date ঠিক আছে কি না।
ইস্যুইং প্রসেসর (Issuing Processor): কার্ড জেনারেশন, কার্ড এক্টিভেশন, ক্লিয়ারিং (clearing) ও সেটেলমেন্ট (settlement) প্রসেস যেই মডিউলটি সম্পন্ন করে। আমি পরের একটি পোস্টে এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
অনেক সময় দেখা যায় একই সফটওয়্যার অথরাইজেশন ইন্জিন এবং ইস্যুইং প্রসেসর দুই ভুমিকায় কাজ করছে।
কার্ড নেটওয়ার্ক (Card Network): একটি প্রযুক্তিগত অবকাঠামো বা প্ল্যাটফর্ম যার মাধ্যমে অ্যাকুয়ারার এবং ইস্যুয়ার এর মধ্যে বিভিন্ন পেমেন্ট ম্যাসেজ (authorization, clearing, settlement) আদান প্রদান হয়। এর আরেক নাম Payment Network. যেমন: NPSB, RTGS, BEFTN, QPay(Q-Cash) [Bangladeh], VisaNet, MasterCard Network, Discover, AMEX Network, UnionPay, RuPay [India], NPP [Australia]
পেমেন্ট স্কিম (Payment Scheme): পেমেন্ট নেটওর্য়াকে যেই সব নিয়ম কানুনএর মাধ্যমে বিভিন্ন পেমেন্ট ম্যাসেজ (authorization, clearing, settlement) আদান প্রদান হয়। যেমন: TakaPay [Bangladesh], Visa, MasterCard, AMEX, UnionPay, SWIFT, Unified Payment interface (UPI) [India], Single Euro Payments Area (SEPA), PayTo, PayId [Australia]
উপরে দেখা যাচ্ছে Visa, MasterCard, AMEX ইত্যাদি দুই জায়গাই আছে। অর্থাৎ এরা একই সঙ্গে Network এবং Scheme ।
ফিজিক্যাল কার্ড (Physical Card): ফিজিক্যালি প্রিন্টেড কার্ড। এর আরেক নাম প্লাস্টিক কার্ড।
ভারচুয়াল কার্ড (Virtual Card): যখন কার্ডের ফিজিক্যাল কোন অস্তিত্ব থাকে না।
কার্ড সিকিউর ডাটা (Card Secure Data): কার্ডধারীর নাম, মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ এবং সিভিভি(CVV/CVV2)
কার্ড প্রেজেন্ট ট্রানজ্যাকশন (Card Present Transaction – CP): যখন ফিজিক্যাল পেমেন্ট কার্ডটি উপস্থিত থাকে এবং সরাসরি টার্মিনালে রিড করানো হয়, যেমন swipe বা tap এর মাধ্যমে স্বপ্ন বা মিনা বাজারে পেমেন্ট করা।
কার্ড নট প্রেজেন্ট ট্রানজ্যাকশন (Card Not Present Transaction – CNP): যখন পেমেন্ট কার্ডটি সরাসরি টার্মিনালে রিড করানো হয় না বা Virtual Card দিয়ে ওয়েবসাইটে (Virtual Terminal) কার্ড সিকিউর ডাটা ম্যানুয়ালি প্রবেশ করানো হয় যেমন রেলওয়ের টিকট ক্রয়, ফুডপান্ডাতে পেমেন্ট।
অনলাইন ট্রানজ্যাকশন (Online Transaction): ট্রানজ্যাকশন এবং অন্যান্য চেক যাচাই করার জন্য যখন Issuer সিস্টেমের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। CP ও CNP দুটোর জন্য প্র্রজোজ্য
অফলাইন ট্রানজ্যাকশন (Offline Transaction): অনেক সময় দেখা যায় চিপ (Chip) যুক্ত কার্ড (EMV কার্ড) একটি POS ডিভাইসে Tap বা Swipe করার সাথে সাথেই ট্রানজ্যাকশন হয়ে যাচ্ছে, কোন পিন এর প্রয়োজন হচ্ছে না । CP এর জন্য প্র্রজোজ্য। আমি পরের একটি পোস্টে এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ISO 8583: কার্ড-ভিত্তিক অর্থপ্রদানের সাথে জড়িত বিভিন্ন সিস্টেমের মধ্যে আর্থিক বার্তা বিনিময়ের জন্য ব্যবহৃত একটি আন্তর্জাতিক মান।
পরের পোস্টে উপরের শব্দগুলো আমি ছবি বা ফ্লো-চার্ট এর মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করব।